১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
সর্বশেষ

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে চাঞ্চল্যকর রিসান হত্যার রহস্য উদঘাটন

জালাল উদ্দিন/টোয়েন্টিফোর মিডিয়া ডটকম :

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে স্কুলছাত্র রিসফু হু ইয়া ইয়া ওরফে রিসান (১৬) হত্যাকা-ে জড়িত মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-১৩। রোববার (৩০ জানুয়ারি) ঘোড়াঘাট থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন, ঘোড়াঘাট থানা এলাকার বিল্লাল উদ্দিনের ছেলে স্বাধীন উদ্দিন (২৯) এবং ১৬ ও ১৪ বছর বয়সী দুই কিশোর।

সোমবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুওে র‌্যাব – ১৩ কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান উপ-অধিনায়ক মেজর সৈয়দ মইদুল ইসলাম। দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট থানাধীন কশিগাড়ী গ্রামের পাঁচ মাথা মোড়ের কাছে পরিত্যক্ত একটি হোটেলে দুর্বৃত্তরা একজন ১৬ বছরের কিশোরের পায়ের রগ ও গলা কেটে করে হত্যা করে রেখে যায়।

ঘটনাটি শনিবার (২৯ জানুয়ারি) এলাকার লোকজনের মুখে মুখে প্রচার হতে থাকে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়, যা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ওইদিন ঘটনাটি একই এলাকার রুমিজা খাতুনের (৪১) কাছে পৌঁছালে তিনি উক্ত স্থানে হাজির হয়ে লাশটি তার একমাত্র ছেলে রিসফু হু ইয়া ইয়া ওরফে রিসানের বলে শনাক্ত করেন।

এসময় রুমিজা খাতুন জানান, তার ছেলে দিনাজপুর জেলার রাণীগঞ্জ বাজারস্থ আল-হেরা ইসলামী প্রি-ক্যাডেট স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনার পাশাপাশি রাণীগঞ্জ বাজারে একটি ভ্রাম্যমাণ খাবার হোটেলে পার্ট টাইম কাজ করত। গত ২৮ জানুয়ারি (শুক্রবার) রাতে তার বাবার ওষুধ আনার জন্য রানীগঞ্জ বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এরপর দীর্ঘসময় চলে গেলেও সে বাসায় না ফেরায় তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়ে।

পরের দিন সকালে লোাকজনের মুখে শুনে তিনি উক্ত স্থানে গিয়ে তার একমাত্র ছেলের লাশ দেখতে পান। পরবর্তীতে রুমিজা খাতুন নিজে বাদী হয়ে শনিবার অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মইদুল ইসলাম আরও জানান, এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১৩ ঘটনার বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে।

ছায়া তদন্তের একপর্যায়ে ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন জায়গা হতে চাঞ্চল্যকর কিশোর হত্যার ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটনসহ হত্যার সাথে জড়িত আসামি স্বাধীন উদ্দিন এবং তার সহযোগী দুই কিশোরকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী স্বাধীন উদ্দিন স্বীকার করেছেন যে, তিনি প্রায় দশ মাস আগে রিসানকে প্রতি মাসে সুদের বিনিময়ে টাকা ধার দেন।

রিসান প্রথম তিন মাস সুদের টাকা পরিশোধ করলেও পরিবর্তীতে সুদের টাকাসহ মূল টাকা দিতে ব্যর্থ হয়। উক্ত টাকাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় রিসানের সঙ্গে স্বাধীনের দ্বন্দ্ব হয়। এছাড়াও রিসানের পারিবারিক সূত্র থেকে জানা যায় যে, মায়ের ২০ হাজার টাকা রিসানের কাছে গচ্ছিত ছিল। এ ঘটনাও ঘাতকদের কাছে অজানা ছিল না।

এরই জের ধরে গত ২৭ জানুয়ারি স্বাধীন উদ্দিন তার দুই কিশোর বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে রিসানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৮ জানুয়ারি রাত আনুমানিক দশটার দিকে আসামি স্বাধীন তার কিশোর বন্ধুদের মাধ্যমে রিসানকে রাণীগঞ্জ বাজারে তার পানের দোকানে ডেকে নিয়ে আসলে তাদেরকে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট থানাধীন কশিগাড়ী গ্রামের পাঁচ মাথা মোড়ের নিকট পরিত্যক্ত হোটেলে যেতে বলেন। পরবর্তীতে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী স্বাধীন তার পানের দোকান বন্ধ করে আনুমানিক সোয়া দশটার দিকে ঘটনাস্থলে যান।

সেখানে আসামি স্বাধীন পাওনা টাকা ফেরত চেয়ে না পেলে রাগান্বিত হয়ে তার সাথে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে রিসানের গলা কাটেন। এসময় রিসান চিৎকার করলে স্বাধীনের এক কিশোর বন্ধু ভিকটিমের মুখের ভেতর বালু দিয়ে চেপে ধরে এবং অপর কিশোর তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে তার পায়ের রগ কেটে দেয়। পরে পৌনে এগারোটার দিকে রিসানকে রেখে তারা পালিয়ে যায়। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান উপ-অধিনায়ক মেজর সৈয়দ মইদুল ইসলাম ।

Facebook
Twitter
Pinterest
Reddit
Skype
Email
LinkedIn