১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
সর্বশেষ
  • প্রচ্ছদ
  • শিক্ষাঙ্গন
  • যশোর শিক্ষা বোর্ডের অফিস সহকারী আব্দুস সালাম দুর্নীতির মাধ্যমে শতকোটি টাকার মালিক

যশোর শিক্ষা বোর্ডের অফিস সহকারী আব্দুস সালাম দুর্নীতির মাধ্যমে শতকোটি টাকার মালিক

স্টাফ রিপোর্টার / নিউজ টোয়েন্টিফোর মিডিয়া :

১৯৯১ সালে যশোর শিক্ষা বোর্ডে মাস্টার রোলে পিয়ন হিসেবে নিয়োগ পান আবদুস সালাম। ২০১৫ সালে চাকরি স্থায়ী হয়। ২০২১ সালের শুরুতে পদোন্নতি পেয়ে হন সাধারণ সহকারী। মূলত পিয়ন থাকা অবস্থায় আবদুস সালাম বোর্ডে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জনে নামেন। এরপর টাকা আয়ের নেশা পেয়ে বসে তাকে। পরীক্ষার খাতার নম্বর বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া, ব্যাংকের পে-অর্ডার জালিয়াতিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সর্বশেষ বোর্ডের ৭ কোটি টাকা জালিয়াতির মামলার আসামি তিনি। এখন আবদুস সালামের অবৈধ টাকার পরিমাণ প্রায় শতকোটি টাকা।

শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে আবদুস সালামের বাবা আবদুস সামাদ নোয়াখালী থেকে যশোর শহরতলির উপশহরে বসবাস শুরু করেন। এরপর তিনি শিক্ষা বোর্ড অফিসে পিয়ন পদে চাকরি পান। বাবার চাকরির সুবাদে আবদুস সালাম ১৯৯১ সালে মাস্টার রোলে শিক্ষা বোর্ডে কাজ শুরু করেন। ২০১৫ সালে তার চাকরি স্থায়ী হয়। ২০২১ সালে পদোন্নতি পেয়ে তিনি হিসাব সহকারী হন বলে জানান বোর্ডের হিসাব শাখার উপপরিচালক এমদাদুল হক।

বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, আবদুস সালাম বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মদদে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। পিয়ন থাকাবস্থায়ই তিনি অবৈধ কাজে নামেন। ওই সময় সোনালী ব্যাংকের পে-অর্ডার জালিয়াতি করে ধরা পড়েন। কিন্তু তত্কালীন চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয়।

২০২১ সালের ৭ অক্টোবর যশোর শিক্ষা বোর্ডের ৩৮টি চেকে জালিয়াতির মাধ্যমে লোপাট করা হয় ৭ কোটি টাকা। এ ঘটনার পর বোর্ড কর্তৃপক্ষ যশোর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ করে। তদন্তে নেমেই দুদক দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় মামলা করে। এতে আসামি করা হয় পাঁচজনকে। এরা হলেন তত্কালীন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোল্লা আমীর হোসেন, সচিব অধ্যাপক এএমএইচ আলী আর রেজা, কর্মচারী আব্দুস সালাম, জালিয়াতি চক্রের প্রধান ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক রাজারহাট এলাকার বাসিন্দা আবদুল মজিদ আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম বাবু ও শেখহাটী জামরুলতলা এলাকার শাহীলাল স্টোরের মালিক মৃত সিদ্দিক আলী বিশ্বাসের ছেলে আশরাফুল আলম। জালিয়াতির প্রমাণ ঢাকতে সাবেক চেয়ারম্যান মোল্যা আমীর হোসেন হিসাব শাখাটি বন্ধ করে দেন। সর্বশেষ বোর্ডের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন গত ৮ ফেব্রুয়ারি হিসাব শাখাটির তালা ভেঙে আবদুস সালামের আলমারি থেকে পান কোতোয়ালি থানার ওসিসহ বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের সিল, জাল চেকবইসহ জালিয়াতির বিভিন্ন উপকরণ। এসব উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম মিকাইল ইসলাম।

বর্তমানে আবদুস সালাম একাধিক বাড়ি ও জমির মালিক। উপশহর ই-ব্লকের ১৪১ নম্বরে নির্মাণ করছেন বহুতল ভবন। উপশহরে রয়েছে আরো একটি বাড়ি। এছাড়া শ্বশুরবাড়ি এলাকায়, পালবাড়ি ও শহরের টিঅ্যান্ডটি সড়কের পাশে রয়েছে তার বাড়ি। শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে রয়েছে শেয়ার। সেখানে বিনিয়োগ করেছেন ৫০ লাখ টাকা, ঘনিষ্ঠদের সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে আবদুস সালামের ব্যবসায়িক পার্টনার জালিয়াতি মামলার আরেক আসামি ভেনাস প্রিন্টিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবুর সঙ্গে চলছে একাধিক ঠিকাদারি কাজ।

শিক্ষা বোর্ডের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আবদুস সালাম ও ভেনাস প্রিন্টিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবু সাত-আট বছর ধরে শিক্ষা বোর্ডে ঠিকাদারি কাজ করছেন। যশোর শিক্ষা বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহসান হাবীব জানান, ৭ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় দুদকে মামলা চলছে। এরপর জাল সিল, প্যাড ও চেক উদ্ধারের ঘটনায় দুদক ব্যবস্থা নেবে। তবে আমরা আবদুস সালামকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু করেছি।

দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক আল আমিন জানান, বোর্ডে জালিয়াতির ঘটনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলি হওয়ার পর এখনো নতুন কাউকে প্রধান কার্যালয় থেকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। আশা করছি, খুব শিগগির তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ হয়ে যাবে।

Facebook
Twitter
Pinterest
Reddit
Skype
Email
LinkedIn